ঝিনাইদহ শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১২ আওলিয়ার বারবাজার। প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক স্থানটি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়। এ স্থানকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা কৌতুহল। লুপ্ত গৌরবের বারবাজার কারা প্রতিষ্ঠা করেছিল, তা সঠিক করে কেউ বলতে পারে না। এর নামকরণ নিয়েও রয়েছে রহস্য।

কারো মতে, সিলেট অঞ্চল থেকে ১২ আওলিয়া হযরত বড়খান গাজির সাথে এসে এখানে আস্তানা গাড়েন। সেই থেকে বারবাজার নামের উৎপত্তি। আবার অনেকের মতে, খানজাহান আলী (রা.) এর সাথে ১১ জন দরবেশ বাগেরহাট পৌঁছানোর আগে সুন্দরবন অঞ্চল ও আশেপাশে ইসলাম প্রচার করতেন। তারাই এখানে অবস্থান করতেন বলে এই নামকরণ করা হয়।

কারো মতে, ১২টি বাজার নিয়ে গঠিত বলেই এলাকার নাম দেয়া হয়েছিল বারবাজার। প্রাচীন এই জনপদের পরিধি ছিল ১০ বর্গ মাইল। এই ১০ বর্গমাইল এলাকার মধ্যে গড়ে ওঠে খোশালপুর, পিরোজপুর, বাদুরগাছা, সাদেকপুর, এনায়েতপুর, মুরাদগড়, রহমতপুর, মোল্লাডাঙ্গা, বাদোদিহি, দৌলতপুর, সাদগাছি ও বেলাট নামে বারটি বাজার। একারণে জনপদের নাম হয় বারবাজার।

১২ আওলিয়ার বারবাজার কথিত আছে, ১২ জন পীর আওলিয়ার নামে বারবাজারের নামকরণ হয়। তারা হযরত বড়খান গাজির সঙ্গীও ছিলেন। তাদের গ্রামগুলো হলো এনায়েত খাঁর এনায়েতপুর, আবদাল খাঁর নামে আবদালপুর, দৌলত খাঁর নামে দৌলতপুর, রহমত খাঁর নামে রহমতপুর, শমসের খাঁর নামে শমসেরপুর, মুরাদ খাঁর নামে মুরাদগড়, হৈবত খাঁর নামে

হৈবতপুর, নিয়ামত খাঁর নামে নিয়ামতপুর, সৈয়দ খাঁর নামে সৈয়দপুর, বেলায়েত খাঁর নামে বেলাত বা (বেলাটনগর) ও শাহাবাজ খাঁর নামে শাহাবাজপুর। আরো পড়ুন: বাংলা ভাষার ব্যবহার কি ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে? এসব আওলিয়ার নামে শুধু বারবাজার নয়, পার্শ্ববর্তী অনেক গ্রামমগঞ্জের নামও তাদের নামানুসারে রাখা হয়েছে।

তবে ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায়, বারবাজারে হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজাদের রাজধানী ছিল। গ্রীক ইতিহাসে পেরিপাসে প্রথম শতকে যে গঙ্গারিডি বা গাঙ্গেয় রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় তা এর নদী বিধৌত এলাকা। এখানে গঙ্গারিডি নামের এক শক্তিশালী জাতি বাস করত। এদের রাজধানী ছিল বারবাজার।